Advertisement

উন্মেষ

শিশির আজমের একগুচ্ছ কবিতা

weeklyunmesh

কুয়াশা ও বাতি

তোমার নিমন্ত্রণেই আমি ডুবুরিদের পার্টিতে যোগ দিলাম জীবাষ্মসমেত
যখন আমার রক্তের ভিতর প্রবাহিত হচ্ছিল
তিনতিনটে অন্ধকার আঠালো রাস্তা
কাঁচের দেয়ালগুলো চুরমার হয়ে যাবে
ভার্জিন বেশ্যার হাসি অলঙ্কার আর জীবিত লোহাদের পরমোৎকর্ষতায়
ঠোঁটের অস্পষ্ট ধ্বনি ফিসফিসানি পুরো বাড়িটাকেই 
ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সুবর্ণবাংলার প্রজননশীল মানচিত্রদশায়
একটা মৃত্যু একটা চড়ুই একটা পচনশীল দাঁত
এরকম আরও কতো অনুভব টালমাটাল লোভাতুর সভ্যতার গাঁইগুই
অথচ তুমি ছিলে না
হয়তো ইঁদুরের গর্ভ আর গর্ভচ্যূতির সংকটে তুমি চাইছিলে
চাচা আপন প্রাণ বাঁচা
এদিকে কুয়াশায় বৈদ্যতিক বাতি ছুটছিল বমি ছুটছিল তোমার পাশেপাশে
তোমার পূর্বপুরুষের লাম্পট্য আর অত্যাচারের সামনে

ওদের দাঁত নেই

ভোর হতে না হতেই ওরা আমার বাড়িতে ঢুকলো
উঠোনে শিউলি গাছ
তলে
ফুটফুটে ভাতের দানার মতো ফুটে রয়েছে
রাতের ঝরে পড়া সমস্ত শিউলি
ওরা
ফুলগুলো কুড়িয়ে নিলো
ফুল আর কুমড়োলতা
আর স্মৃতি
আর আধপোড়া নক্ষত্র
আর
চিবিয়ে খেতে লাগলো
কিন্তু যেহেতু ওদের দাঁত নেই
মানে দাঁত কাকে বলে সেইটা যেহেতু ওরা জানে না

ফিলিস্তিন

সৌরজগতের অসীম আঁধারে পৃথিবী নীল রঙের এক গ্রহ
আমি জানতাম
এখানে ইসরাইল নামে এক দেশ আছে
ফিলিস্তিন নামেও এক দেশ আছে
হ্যা ফিলিস্তিন
এখন
ফিলিস্তিন নামে যে একটা দেশ আছে এটা প্রমাণ করবে কে
কীভাবেই বা প্রমাণ করা যাবে
এই প্রশ্ন আমি রাখছি মহান আর জগদ্বিখ্যাত সব পদার্থবিদের কাছে
রাজনীতিবিদ আর ব্যাবসায়ীদের কাছে
আর বাকি দুনিয়ার কাছে
যে দুনিয়ার আমিও একজন
হ্যা আমি
যে
আজও
ফিলিস্তিনিদের রক্তের ওপর আস্থা রাখছি

কোয়ান্টাম ক্যালিগ্রাফি

উনি ভাল মানুষ ছিলেন খুবই ভাল মানুষ
এমন কি উনি ঈশ্বরেও বিশ্বাস করতেন
ভুট্টার দুধ খেতেন ছায়ারাশির ভিতর নিজেকে ওজনহীন করে
নেবার আগে
নিয়মিত জল দিতেন বাদামগাছে
আর ভালবাসতেন কুকুর কিন্তু পুশতেন না
জানো তো কুকুর গু খায় না কবি খায়

ওনার বোধগম্য হতো না কবিরা কোন কবিতা লেখে
কবিতাই লেখে
চাঁদের নিজস্ব আলো কেন নেই
রাজার মাথাভর্তি কোন গোবর

গরুর চামড়া শুয়োরের চামড়া শরীর থেকে ছাড়িয়ে নেবার পর
ওদের মাংস আমরা খাই
ওদের সুস্বাদু হাড়ও চিবিয়ে চিবিয়ে খাই
কিন্তু ওরা যদি মানুষের শরীর থেকে চামড়া তুলে ফেলে
না পেট্রোলিয়াম না কারাভানসারি 
ওরা কিছুই পাবে না
ওরা খুবই দুর্ভাগা উনি ভাবতেন

ওকে আমি পছন্দ করতাম খুবই পছন্দ করতাম
কোথাও কি ওর সঙ্গে আমার মিল ছিল বা হাউসবোট নস্টালজিয়া
উনি চূড়ান্ত অসুখী ছিলেন
অবশ্য এটা উনি জানতেন না বোধ করি
আমি কি অসুখী
ওকে আমি সন্দেহ করতাম
এখন
নিজেকে সন্দেহ করি

বেগুন

ডাঁসা ডাঁসা নিষ্কলঙ্ক বেগুন বাজার থেকে কিনে এনেছি
ডাঁসা ডাঁসা
নিষ্কলঙ্ক
দোকানে ঝুড়ির ভেতর ওরা আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল
দোকানদার বোঝেনি
কিন্তু বাড়িতে বৌ রেগে টং
কেন না বৌ নিজ হাতেই তো কেটেছে ঐ বেগুনগুলোকে
ফালি ফালি করে কেটেছে
আর এতো এতো পোকা
এতো এতো পোকা
ওরা পুষে রেখেছে
ওরা
ঐ বেগুনগুলো
নিজেদের ভেতর
আমি তো অবাক
বুঝতে পারছি না আমি কার কাছে লজ্জিত হবো
বৌয়ের কাছে 
না বেগুনগুলোর কাছে

Post a Comment

0 Comments